পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সম্পর্কিত তথ্যঃ-বাস্তবিক কিছু বিষয় প্রতিটি ভার্সিটি ভর্তি যোদ্ধাদের জানা দরকার | Public University Admission Guidelines
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। চলুন, প্রচলিত সেই ভুল ধারণাগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাক
ভুল ধারণা : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মানেই গার্ল ফ্রেন্ড ম্যানেজ করা নিয়ে নো টেনশন। পাবলিকে পড়তে পারলেই পেছনে গার্লফ্রেন্ডদের লাইন লেগে যাবে। একটা গার্ল ফ্রেন্ডতো কোন ব্যাপারই না। পাবলিক ভার্সিটি মানেই একাধিক গার্ল ফ্রেন্ড।
সঠিক ধারণা : গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করা সব জায়গাতেই কঠিন। সেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আর যাইহোক না কেন। সত্যি বলতে কি, মাইয়াগুলা না অনেক মোডি! পোলাপানদের পাত্তা দিতে চায় না।
ভুল ধারণা : পাবলিকে পড়তে পারলেই হল। চাকরি পাওয়া নিয়ে কোন চিন্তাই করা লাগবেনা। চাকরিদাতারা উঠে পড়ে লাগবে কে কার আগে বুকিং দেয় এইটা নিয়ে। পাবলিক ভার্সিটির ট্যাগ থাকলেই হল, চাকরি আর যায় কই!
সঠিক ধারণা : গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করার মত চাকরি ম্যানেজ করাও সহজসাধ্য ব্যাপার না। পাবলিকে পড়তে পারলেই চাকরি হয়ে যাবে, এটা পুরোটাই একটা ফালতু ধারণা। চাকরি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই যোগ্য হওয়া লাগবে। ভালো রেজাল্ট নিয়ে অনার্স, মাষ্টার্স কমপ্লিট করা সত্ত্বেও অনেক বড় ভাইকে চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখেছি। তবে এটা সত্য যে, সার্টিফিকেটে একটা পাবলিক ভার্সিটির নাম থাকা মানে, সার্টিফিকেটটার ওজনটা অনেক বেড়ে যাওয়া।
আরো জানুন:- ছাত্র/ছাত্রীরা নতুন নিয়মে টেলিটক “বর্ণমালা” সিম নিবেন যেভাবে
ভুল ধারণা : পাবলিকে পড়া প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট ওই একেকটা মাল্টিট্যালেন্টের ডিব্বা! এদের মত এতটা ব্রিলিয়ান্ট আর হয়ই না।
সঠিক ধারণা : পাবলিকে মাল্টিট্যালেন্টদের অভাব নাই, ইভেন আল্ট্রাট্যালেন্টদের সংখ্যাটাও কম না। এরা ড্রোন বানাতে পারে, রোবট বানাতে পারে, নতুন নতুন থিওরি বের করতে পারে, যুগান্তকারী আইডিয়া আবিষ্কার করে সবকিছু বদলে দিতে পারে…এইগুলা সত্য। কিন্তু এর মানে এই না যে, সব পাবলিক পড়ুয়ারাই অসাধারণ ট্যালেন্টেড আর ব্রিলিয়ান্ট হয়। পাবলিকে এমন এমন আবুল মার্কা কম জানা স্টুডেন্ট আছে এদের দেখলে মাঝেমাঝে আপনার সুইসাইড খেতে ইচ্ছে করবে। কেমনে যে এরা চান্স পায়?
ভুল ধারণা : পড়তে পড়তে শহীদ হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেই হল। সুখ আর সুখ! বিশ্ববিদ্যালয়েতো পড়াশোনা একদমই করা লাগে না।
সঠিক ধারণা : কিছু কিছু ডিপার্টমেন্ট আছে এগুলাতে পড়তে পারলে আপনার লাইফ পুরোটাই হেল হয়ে যাবে। মাঝেমধ্যে কিন্ডারগার্টেনে পড়ছেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এইটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাবেন। ইন ফিউচারে আপনার সন্তান যখন আপনাকে প্রশ্ন করবে, বাবা তোমাদের ক্লাসে কতটা সুন্দরী মেয়ে ছিলো? আপনি তখন আন্সার দেবেন, বাবা, আমিতো অমুক ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম।পড়াশোনা আর রিসার্চের চাপটা এতটাই বেশি ছিল যে, আমাদের ডিপার্টমেন্টে আদৌ কোন মেয়ে ছিল কিনা এইটাই খেয়াল করা হয়ে ওঠে নি!
ভুল ধারণা : গাল দুইটা মুখের ভেতরে ঢুকে গেছে, দেখতেও অনেক চিকন, মাথার চুল ইয়া লম্বা, উসকোখুসকোও, হাঁটতে গেলেই শরীরটা ডানে বামে হেলে পড়তে চায়, চোখে চশমা… তারমানে এরা পড়াশোনায় এতটাই বিজি যে, শরীর আর বাইরের পৃথিবী কিভাবে চলে এসব দেখার সময়ই তাদের হয়ে ওঠে না। এত্ত পড়াশোনা কেমনে যে করে!
সঠিক ধারণা : আমার ইয়ারমেট একটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, ” এডমিশন টেস্টে যে পরিমাণ পড়াশোনা করছিলাম, এখন যদি তার একভাগ পড়াশোনাও করতাম তাহলে বোধহয় ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হওয়া কোন ব্যাপারই ছিল না। ” বুঝতেই পারছেন অবস্থা করুণ। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যতীত বাকিরা সারাদিন এটা ওটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পড়াশোনার সময় কোথায় তাদের? টার্ম টেস্ট আর সেমিস্টার ফাইনাল আসলেই বই খোলার সুযোগ হয় বেশিরভাগ স্টুডেন্টেরই। তাও পরীক্ষার আগের রাতে। পরীক্ষার আগের রাতে অনেকেই আবার স্ট্যাটাস মারে ” কালকে পরীক্ষা… পড়ার টেবিলে বসতে গিয়েই খেয়াল হল, আমারতো এখনো বইটাই কেনা হয় নি! “
ভুল ধারণা : ক্লাসরুমে যখন ইচ্ছা ঢোকা যায় আবার যখন ভালো লাগে না তখন বেরিয়ে যাওয়াও যায়। তাছাড়া স্কুল কলেজের মত প্রত্যেক দিন ক্লাস করার ঝামেলাটাও নেই। ইচ্ছা হলেই ক্লাস কর, নাহলে নাই।
সঠিক ধারণা : ছোট বেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা উঠলেই এই ডায়ালগটা শুনতাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি ইচ্ছামত ক্লাস করা যায়, যখন ইচ্ছা তখনি ক্লাসরুমে প্রবেশ করা কিংবা বের হওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে দেখি, ব্যাপারটা সম্পূর্ণই উল্টো!একদিনও ক্লাস মিস করা যায় না। স্কুল, কলেজে প্রায়ই অসুখ হয়েছে বলে ফাঁকি দেওয়া যেত। কিন্তু এখানে এই সুযোগটা নাই। ক্লাস ফাঁকি দিলে কেউ কিছু বলবে না ঠিক, কিন্তু এ্যাটেনডেন্সে মার্কস আছে, যেটা ফাইনালে যোগ হয়।
ব্যস আর ফাঁকি দিবা কেমনে? অনেক স্যারদের ক্লাসে যথা সময়ের অনেক পরে এসেও প্রবেশ করার সুযোগ পাওয়া যায়। আবার অনেক স্যার ক্লাসে ঢুকেই দরজা অফ করে দেন। দেরিতে আসলে ক্লাস মিস, সহজ হিসাব। আর ক্লাস থেকে ইচ্ছামত বের হওয়ার ব্যাপারটা এখন অবধি চোখে পড়েনি। অনুমতি ব্যতীত বাইরে যাওয়া যাবে না।
ভুল ধারণা : পাবলিকে পড়ুয়াদের টিউশনির কোন অভাব হয় না। উচ্চ বেতনে প্রত্যেকেই চার-পাঁচটা টিউশনি করায়।
সঠিক ধারণা : চার-পাঁচটা টিউশনি অনেকেই করায়। বেশ টাকাও পায়। কিন্তু সবার ভাগ্যতো আর একি না। অনেকেই টিউশনি খুঁজতে খুঁজতে অবস্থা কাহিল করে ফেলে কিন্তু টিউশনি পড়ানোর কোন স্কোপই পায় না, উচ্চ বেতনতো অনেক পরের ব্যাপার।
ভুল ধারণা : পড়াশোনার পাশাপাশি সবাই-ই একটা না একটা পার্টটাইম জব করে।
সঠিক ধারণা : সকাল ৮ টায় একটা ক্লাস, দুপুর বারোটায় একটা আবার বিকেল তিনটায় একটা ক্লাস যদি থাকে… কার এত সাধ্য আছে যে, সে পার্টটাইম জব করবে? অবশ্য অনার্স শেষের দিকে অনেকেই সাহসটা করে ফেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব চালিয়ে যাওয়াটা অনেক টাফ!
{বিঃদ্রঃ বস্তাপচা মোটিভেশান দিয়ে লাভ নেই,বাস্তব কথাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।}
নির্যাস শিক্ষা পরিবার এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ম্যানশন/শেয়ার করুন তা তে আমরা উৎসাহ পাই।
সংগৃহীত:- Md Nadir Hossain
নির্যাস শিক্ষা পরিবার
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক (নির্যাস কোচিং হোম)
বিবিএ, এমবিএ